এ বছর এ পর্যন্ত ১০ জন নিপাহ ভাইরাসে আক্রা*ন্ত হয়েছে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রা*ন্তদের মধ্যে অর্জন মৃ*ত্যুবরণ করেছে। যা ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আই ই ডি সি আর) অনুসারে, দেশের সব জেলাই এখন নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আই ই ডি সি আর এর পরিচালক অধ্যাপক তেহমিনা শিরীন বলেন, আমরা নিপাই ভাইরাসের উপর নজর দাড়ির ওপর জোর দিয়েছি। যখনই নতুন কেস আসে আমরা খবর পাই। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৮ জন মৃ*ত্যুবরণ করেছে।
কিছু জেলায় রোগী পাওয়া গেলেও সব জেলাই ঝুকির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, বেঁচে গেলেও তাকে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা সম্মুখীন হতে হয়। আমরা যদি খাওয়া বন্ধ করতে পারি। কাচা খেজুরের রস, তাহলে আমরা ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে পারি।
দেহমিনা শিরীন আরো বলেন, সতর্কতার সঙ্গে রস সংগ্রহ করলেও ঝুঁকি রয়েছে। কারণ বাদুড়ের লালা ও প্রস্রাবের দ্বারা রসে ভাইরাস আসে।
তিনি বলেন, কাঁচা খেজুরের রস পান করলে সাধারণত ৭ থেকে ৯ দিনের মধ্যে ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। একই সময়ে সংক্র*মিত রোগীর স্পর্শে আসার ৬ থেকে ১১ দিনের মধ্যে লক্ষণ গুলি দেখা দেয়। ২০০১ সালে দেশের প্রথম নিপাহ ভাইরাস সনাক্ত হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩২৫ জনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভাইরাসে সনাক্ত করা হয়েছে। আক্রা*ন্তদের মধ্যে ২৩০ জনের মৃ*ত্যু হয়েছে। গতবছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রা*ন্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন মা*রা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতদিন সচিবালয়ে নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, চলতি মৌসুমে এই ভাইরাসের মৃ*ত্যুর হার ৮০ শতাংশ। স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, এর আগে দেশে ২৮ টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্র*মণ পাওয়া গিয়েছিল। মহাখালীর ডিএনসিসি ১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য মোট ২০টি শয্যা প্রস্তুত করার অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
নিপাহ ভাইরাসের লক্ষণ ও করণীয়:
নিপাহ রোগ বলতে মূলত নিপাহ ভাইরাস সংক্র*মণের কারণে সৃষ্টির উপসর্গ কে বুঝায়। লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, প্রলাপ, খিচুনি, শ্বাসকষ্ট ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক সময় কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। এই রোগে মৃ*ত্যুর হার অনেক বেশি।
নিপাহ ভাইরাস একটি উদীয়মান জুনোটিক ভাইরাস যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্র*মিত হয়। ভাইরাস মস্তিষ্ক বা শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে। এটি হেনিপা গোত্রের একটি ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাস এনসেফালাইটিস নামক মস্তিষ্কের একটি প্রদান জনক রোগ সৃষ্টি করে।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় নিপাহ ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হয়। ভাইরাসটি প্রথমে মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে শূকর খামারে কাজ করা কৃষকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি সংক্র*মিত শূকর, তাদের লালা এবং সংক্রা*মিত মাংস স্পর্শ করে ছড়ায়। পরবর্তীতে এই রোগটি মানুষ থেকে মানুষের ছড়িয়ে পড়ে।
বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রথম কেস পাওয়া যায় ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় বাংলাদেশ নিপাহ ভাইরাস মূলত বাদুড় দ্বারা ছড়ায়। বাংলাদেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের ঘটনা ঘটে থাকে। এ সময় খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয় এবং বাদুড়রা গাছের সাথে বাধা পাত্র থেকে রস পান করা চেষ্টা করে এবং রসের হাতে তাদের লালা এবং প্রস্রাব মিশ্রিত করে রসে হাঁড়ির উপর প্রস্রাব করে। বাদুড় যদি নিপাহ ভাইরাস আক্রা*ন্ত হয় এবং কাঁচা রস খায় তাহলে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যেও ছড়াতে পারে। এই রোগটি একজন সংক্র*মিত ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যেও ছড়াতে পারে।
নিপাহ ভাইরাসকে সরাসরি নিরাময়ের জন্য এখনও কোন ওষুধ বা প্রতি*রোধক মূলক ভেকসিন আবিষ্কার হয়নি। তাই এই রোগের বিরু*দ্ধে প্রতি*রোধ মূলক ব্যবস্থা নিন। বর্তমানে এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো, নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচতে নিম্নলিখিত বিষয় গুলো মেনে চলুন:
- ১.. কাঁচা খেজুরের রস বা তাল খাবেন না।
- ২.. খেজুরের কাচা রসে পিঠা বা অন্য কোন খাবার খাবেন না।, রস ভালো করে ছেকে নিন ফুটিয়ে নিতে হবে অথবা গুড় বাড়িয়ে খেতে হবে।
- ৩.. অর্ধ খাওয়া ফল খাবেন না, বাদুড় দ্বারা অর্ধ খাওয়া ফল থেকে নিপাহ ছড়াতে পারে।
- ৪.. যে কোনো ফল ধুয়ে খেয়ে নিন।
- ৫.. সাবান ব্যবহারে নিপাহ ভাইরাস মা*রা যায়, তাই সব ধরনের ফলমূল খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
- ৬.. নিপাহ ভাইরাস এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই আক্রা*ন্ত স্থানে উপসর্গ দেখা দিলে মানুষের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে চলুন এবং চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
নিপাহ ভাইরাস সংক্র*মণ সাধারণত শীতকালে হয়, যখন খেজুরের রস সংগ্রহ করে সেবন করা হয়। এজন্য অক্টোবর মাস থেকে সরকারি বেসরকারি ভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারলে নিপাহ সংক্র*মণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এর পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে ও এর প্রচারণা চালানো উচিত। বিশেষ করে ফেসবুক, ইউটিউব এবং টুইটারে নিজেদের যে সকল অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেখানে নিপাহর ব্যাপারে মানুষকে সতর্কতামূলক পোস্ট আপলোডের মাধ্যমে ব্যক্তি উদ্যোগে ও নিপাহর প্রতিরোধক মূলক সর্তকতা, প্রচারণা চালানো সম্ভব। তাই আসুন সকলে সতর্ক হই এবং সুস্থ থাকি।