আজকে আমরা "অল টিপস বাংলায়" এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যে বিষয় টি সম্পর্কে আলোচনা করা খুবই জরুরি। কেননা আমরা প্রতিনিয়ত মারাত্মক কিছু পাপ কাজে লিপ্ত হতে থাকি এর মধ্য থেকেই একটি পাপ কাজ সম্পর্কে আজকে আমরা আলোচনা করব। পাপের কথা শুনে হয়তো আপনারা বুঝে গেছেন, আজকের "অল টিপস বাংলায়" কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনারা হয়তো ধরে নিয়েছেন এতক্ষণে আজকে ইসলামের কথা হবে। হ্যাঁ আপনাদের ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক আজ কে আমরা ইসলামিক এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। এটি আমাদের সমাজে এর মধ্যেই দেখা যায় অর্থাৎ ইসলামকে ভালোবাসি এমন মনোভাব অথবা এমন ভাবনা প্রকাশ করার জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত এমন নানা কাজ করে যাচ্ছি যেগুলি ইসলাম বিরোধী যেমন বিদআত। মানুষ কিন্তু বিদআত করে থাকে ইসলামের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থাৎ তারা ইসলামের মধ্যে এমন পাগল হয়ে যায় যে, তারা বুঝতে পারে না কোনটি সঠিক এবং কোনটি ঠিক না। অর্থাৎ তারা ধর্মের বাইরের অর্থাৎ ধর্ম নয় এমন জিনিস কে ও ধর্ম ভাবে আর এটি মূলত বিদআত। এরকম একটি বিষয় নিয়ে আমরা আজকে কথা বলব যে বিষয়টি হচ্ছে ফোন সম্পর্কিত অর্থাৎ ফোনের রিংটোন হিসেবে আযান-কে রাখা। এই সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটি সম্পর্কে আজকে আমরা অবগত হব। আপনারা উপরের কথা থেকে হয়তো বুঝে গেছেন। যে এটি রাখা যাবে না। কেননা আমরা উপরে কড়া ভাষায় পাপের কথা বলেছি এবং বিদাআত এর কথা উল্লেখ করেছি। চলুন কথা না বাড়িয়ে মোবাইল ফোনের রিংটোন হিসেবে আযান-কে রাখা যাবে কি? যাবে না সেই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মোবাইল ফোনের রিংটোন হিসেবে আযান-কে রাখা সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ।
অনেকেই আমরা হরহামেশাই আজকাল দেখে থাকি, রিংটোন হিসেবে আজান, ও কোরআন তিলাওয়াত, ইত্যাদিকে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করে। দ্বীনের প্রতি পাগল দ্বীনদার ও ধার্মিক লোকের এটি বেশি করে থাকে। আর তারা এটি করার কারণ তাদের অজ্ঞতা অথবা আমার মনে হয় তারা এই কাজটি এ জন্যই করে দুনিয়ার অন্য সকল লোকেরা যখন গান-বাজনা ইত্যাদি কে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে তার বিপরীত হিসেবে আমরা আল্লাহর আজান, ও কোরআন তিলাওয়াত কে ভালো জিনিস হিসেবে রিংটনে ব্যবহার করি। এর ফলে হয়তো গান-বাজনা এবং বাদ্যযন্ত্রকে কিছুটা হ্রাস করা যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমি এই সব লোকেরা ভালো কাজ করার উদ্দেশ্যে অর্থাৎ ভালো নিয়তে মোবাইল ফোনে আযান ও কুরআন তিলাওয়াত কে রাখে। তাদের উদ্দেশ্য ও নিয়ত অনেক ভালো এ কারণে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু এটি যেহেতু বেশ কয়েকটি কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে মোবাইল ফোনে রিংটোন হিসেবে আযান-কে রাখা বা ব্যবহার করা জায়েজ নয়।
তাই এই সব থেকে মুমিন মুসলমানের বিরত থাকা আবশ্যক কর্তব্য। নিম্নে আমরা রিংটোন হিসেবে আযান-কে রাখা যে নাজায়েজ সেই সম্পর্কে এবং তার কারণ গুলি তুলে ধরার চেষ্টা করব। দয়া করে আপনারা সেগুলি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন এবং এ ধরনের ভালো কিছু করার উদ্দেশ্যে হলেও এই সব পাপ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। কেননা আপনার উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন পাপ তো পাপই হয়। তবুও তাদের অজ্ঞতা অর্থাৎ না জানার কারণে তারা এমন করেছে, জানলে হয়তো করতো না। এ কারণেই আমি তাদের নেক নিয়ত এর দিকে তাকিয়ে তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছি, কিন্তু আমি এখন বলতেছি তারা যেন এটি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকে।
১.. আজানে মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদ ও রাসূল (সাঃ) এর রিসালাতে সাক্ষ্যদান সম্মিলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি। ইসলামী শরীয়তে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। আর অনুরূপ ভাবেই পবিত্র কুরআনের আয়াত আল্লাহ তা'আলার নামের জিকির আমাদের কাছে এবং পুরো মুসলিম বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণণ বিষয তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মোবাইল ফোনের রিংটোন হচ্ছে আপনাকে এটি বোঝানোর জন্য যে কেউ আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আর আপনাকে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব অর্থাৎ একত্ববাদ ও আল্লাহর কুরআনের তিলাওয়াত কে ব্যবহার করা কি ঠিক? আর এই সব অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর একত্ববাদ কে এই সব কাজের জন্য ব্যবহার করা কি এই সব বাক্য গুলোকে অবমাননা করার শামিল নয়।
ক্রেতাকে আকর্ষণ করার জন্য যদি আপনি সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ বলে চিৎকার করেন। এবং পাহারাদার রাত্রে জেগে থাকার জন্য অর্থাৎ রাত জাগতে হবে সেই জাগার হাতিয়ার হিসেবে আল্লাহর যিকির কে ব্যবহার করে। তাহলে ঔ ফিকাহবিদগণ একে ও পবিত্র শব্দ সমূহের অপব্যবহার বলে আখ্যা দিয়েছেন। এখন ভেবে দেখুন আপনার সাথে কেউ কথা বলতে চায়। আর সেইটার খবর দেওয়ার জন্য আল্লাহর একত্ববাদ ও কুরআন তিলাওয়াতের ব্যবহার করা কেমন হবে। ঠিক কিনা ভুল?
২.. ধরুন, মোবাইল ফোন নিয়ে আপনি বাথরুমে গিয়েছেন এমন সময় আপনার ফোনে বেজে উঠলো আযানের ধ্বনি অথবা কুরআন তিলাওয়াত। এতে কি এগুলোর পবিত্রতা মারাত্মক ভাবে ক্ষুন্ন হল না।
৩.. ধরুন, আপনাকে কেউ ফোন করেছে, আপনি ফোন ধরার ব্যস্ততায় সুন্দর একটি কুরআন তেলাওয়াত হচ্ছে সেটার কোনো গুরুত্বই দিলেন না। অথচ আদব হলো অর্থাৎ কুরআন তিলাওয়াত শুনলে কাজ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে তেলাওয়াত শ্রবণ করা।
৪.. আমরা সাধারনত মোবাইল ফোনের রিংটোন ব্যবহার করি। যাতে কেউ কল দিলে আমরা সেটি বুঝতে পারি এবং ফোনটি ধরতে পারি। অর্থাৎ আমাদের উদ্দেশ্য কেউ ফোন দিলে তাড়াতাড়ি করে ফোনটি ধরে ফেলা। আর কুরআন তিলাওয়াতের দিকে আমাদের কোন মনোযোগ থাকে না। ফলে অনেক সময় উৎসারিত অংশ বিবেচনায় অর্থের বিকৃতি হয়ে থাকে। আর পবিত্র কুরআনের অর্থ বিকৃতি করা মারাত্মক পাপ এর অন্তর্ভুক্ত তা বলাই বাহুল্য।
প্রধান কথা অনেক কারনই মোবাইলের রিংটোন হিসেবে আযান, জিকির, ও কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদিকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি। আর মোবাইলের রিংটোন যেহেতু আমাদের কে এটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, কেউ আমাদের সাথে কথা বলতে চায়। এই উদ্দেশ্যেই আমরা রিংটোন ব্যবহার করি। সেখানে আল্লাহর একত্ববাদ, রসূল (সাঃ)- এর রিসালাতের সাক্ষ্য, জিকির, ও কুরআন তিলাওয়াত কে ব্যবহার করা উচিত নয়। আর আমরা যদি রিংটোন হিসেবে এসব কে ব্যাবহার না করি। তাতে আমাদের কোন গুনাহ হবে না। তবে ব্যবহার করলে হয়তো গুনাহ হতে পারে। কেননা দ্বীনের বাহিরে জিনিস কে দ্বীন ভাবাটাই বিদাআত। যদি কেউ এটি কে রিংটোন হিসেবে ব্যবহার করা কে জরুরী মনে করে। তাহলে সে বিদআত কারীর অন্তর্ভুক্ত হবে। যা মারাত্মক পাপ ও গুনাহের কাজ। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকল কে এই সব বুঝে এসব কাজ থেকে বিরত থাকে সঠিক ভাবে ইসলামকে পালন করার তৌফিক দান করুক। এবং ইসলাম বিরোধী ও ইসলামের বহির্ভূত কাজ থেকে আমাদের সকলকে এবং বিশ্বের সকল মুসলমান কে হেফাজত করুক। (আমিন)
আমাদের কথা সম্পর্কিত তত্ত্বের সূত্র সমূহের বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠাগুলি। আমরা নিম্নে উল্লেখ করেছি, যাতে আপনারা চাইলে এই সকল বই গুলি পড়ে ও এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারেন। এবং এসব থেকে বিরত থেকে নিজের জীবন কে সুস্থ, সুন্দর ও ইসলামের পথে তৈরি করতে পারেন।
বইয়ের নাম ও পৃষ্ঠাঃ
- আল আশবাহ ওয়ান্ নাযায়ের, পৃষ্টাঃ ৩৫।
- আল কাফী, খন্ডঃ ১, পৃষ্টাঃ ৩৭৬।
- ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি, খন্ডঃ ৫, পৃষ্টঃ ৩১৫।
- আত্ তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কোরআন, পৃষ্টাঃ ৪৬।
- রদ্দুল মুহতার, খন্ডঃ ১, পৃষ্টাঃ ৫১৮।
আপনারা চাইলে এই গ্রন্থ থেকে উপরোক্ত কথাগুলো প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেন।